বিশেষ প্রতিনিধি সাভার এলাকায় একের পর এক হত্যাকাণ্ডে হৃদয় গ্রুপের সম্পৃক্ততা পেয়েছে র্যাব। সেখানে কয়েকটি গ্রুপের সদস্য সক্রিয় রয়েছে। তাদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার ও মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে সব হত্যাকাণ্ড ঘটছে।র্যাব বলছে, গত বছরের ৯ জুলাই মাদক কেনাবেচার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে পিনিক রাব্বি গ্রুপের সদস্য আকাশ মাহমুদকে খুন করে হৃদয় গ্রুপের সদস্যরা। ১২ মার্চ সাভার পৌর এলাকায় সোহেল এবং ২১ মার্চ সোবহানবাগ এলাকায় আমজাদ নামে দুই ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। এসব হত্যাকাণ্ডে হৃদয় গ্রুপ জড়িত রয়েছে।
সম্প্রতি আকাশ মাহমুদ হত্যাকাণ্ডে ছায়া তদন্তে নেমে র্যাব এসব তথ্য জানতে পারে। রোববার রাতে সাভার এলাকা থেকে হৃদয় গ্রুপের প্রধান হৃদয় হোসেন ওরফে গিয়ার হৃদয়সহ তার গ্রুপের আট সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৪। অন্যরা হলেন– আরিয়ান আহম্মেদ জয় ওরফে ড্যাগার আরিয়ান, নাসির উদ্দিন নাসু ওরফে বাবা নাসু, আবিরুল হক আবির ওরফে কাটা আবির, জোবায়ের হাসান খন্দকার ওরফে পাইটু জোবায়ের, জাকির হোসেন রনি, জাহিদুল ইসলাম ওরফে জাহেদ ও আমির হামজা। তাদের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্র, হেরোইন ও কষ্টিপাথর-সাদৃশ্য মূর্তি জব্দ করা হয়েছে।এ বিষয়ে সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব। এতে র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তাররা ঢাকার সাভার এলাকার হৃদয় গ্রুপের সদস্য। তারা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে আসছিল। তাদের গ্রুপে ১০ থেকে ১৫ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে।র্যাব কর্মকর্তা বলেন, গত চার-পাঁচ বছর ধরে হৃদয়ের নেতৃত্বে ‘হৃদয় গ্রুপ’ এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা, জমি দখল, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগ রয়েছে। এ গ্রুপের সদস্যরা পথচারীদের আকস্মিকভাবে ঘিরে ধরে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সর্বস্ব লুটে নিয়ে পালিয়ে যায়। তাদের আয়ের প্রধান উৎস সাভার এলাকায় নির্মাণকাজে চাঁদাবাজি করা। তারা বিভিন্ন সময় ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবেও কাজ করত।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত বছরের জুলাইয়ে হৃদয় গ্রুপ আড়াপাড়া এলাকায় একটি বাসায় ডিজে পার্টির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে একটি মোবাইল হারানোর ঘটনাকে কেন্দ্র মোবাইল চুরির অভিযোগে দুই যুবককে মারধর করে তারা। এর জেরে সাভারে একটি খাবার হোটেলের ভেতর ‘হৃদয় গ্রুপ’ ও ‘পিনিক রাব্বি গ্রুপে’র সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। এ সময় আকাশকে ধারালো দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। গত ২১ মার্চ পূর্ব শত্রুতার জেরে ছিনতাইয়ের টাকা ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে আমজাদকে হত্যা করা হয়। তাকে কৌশলে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাত করে সবুজবাগ পুকুরপাড়ে ফেলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।
কার কী পরিচয়
র্যাব কর্মকর্তা জানান, গিয়ার হৃদয় সাভার এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। তিনি আকাশ হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় মাদক ও হত্যাসহ ছয়টি মামলা রয়েছে। গিয়ার হৃদয়ের অন্যতম সহযোগী ড্যাগার আরিয়ান। বাবা নাসুও গ্রুপটির সক্রিয় সদস্য। তিনি আমজাদ হোসেন হত্যা মামলার আসামি। তাঁর বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় হত্যাসহ চারটি মামলা রয়েছে। জাহিদুল হৃদয় গ্রুপের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। তিনি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পরামর্শদাতা। তাঁকে সবাই গ্রুপটির উপদেষ্টা বলতেন। জাহিদুল কষ্টিপাথর ও ধাতব মুদ্রা প্রতারণার সঙ্গেও জড়িত। তাঁর নামে সাতটি মামলা রয়েছে। মেশিন রনি গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের দিন হৃদয়ের কাছ থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র কেনেন। রনি আগ্নেয়াস্ত্র ভাড়া দেওয়ার কাজ করেন। এ কারণে তাঁকে সবাই মেশিন রনি বলে ডাকেন। তাঁর বিরুদ্ধে সাভার থানায় হত্যা মামলা রয়েছে।র্যাব কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার হৃদয় গ্রুপের সদস্যদের সাভার থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।